বিশ্বনেতাদের সম্মেলন শি’র ট্রাম্পের উৎপীড়নমূলক আচরণের পরিণতি

চীনের তিয়ানজিনে চলতি সপ্তাহের সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন বিশ্ব রাজনীতির নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই সম্মেলন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরউৎপীড়নমূলকআচরণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বৈশ্বিক বার্তা দিয়েছে। সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজশকিয়ান এবং মধ্য এশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার ২০ দেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধ এবং ভারত চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে এই সম্মেলন ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।

 শি জিনপিং তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেছেন, একতরফা শুল্কনীতি এবং অর্থনৈতিক চাপ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চীন স্থিতিশীলতা সহযোগিতার পক্ষে। আমরা চাই বিশ্ব সমান সুসংগঠিতভাবে বহুমুখী হোক, সব দেশের জন্য খোলা অর্থনীতি হোক এবং ন্যায়সঙ্গত সমতার ভিত্তিতে বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠুক।

তিনি বলেন বলেন, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য একটি মডেল স্থাপন করেছে। তিনি ট্রাম্পের নীতিকে উৎপীড়নমূলকআখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানান।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র চীন, ভারত, ইরান এবং রাশিয়ার ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার তেল আমদানি করায় ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ।

মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো এসসিও সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অংশগ্রহণকেলজ্জাজনকআখ্যা দিয়ে বলেন, ভারতের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকা।

এমন প্রেক্ষাপটে শি জিনপিং এবং পুতিন এসসিও সম্মেলনকে পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত ঐক্যের মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরেছেন করেছেন। উপস্থিত নেতারাও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শুল্কনীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মেলন পশ্চিমা প্রভাবকে টেক্কা দেওয়ার জন্য চীন রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার বার্তা দিচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে শি এবং পুতিনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ভারতচীন সম্পর্কে উত্তেজনা থাকলেও, মোদির এই সফর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এদিকে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য অর্থনীতিতেও অস্থিরতা বাড়িয়েছে। চীনা আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ দায়ের করেছে। এছাড়া, ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করার অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শি জিনপিং চীনকে একটি স্থিতিশীল বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যা বিশ্বের অনেক দেশের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এসসিও সম্মেলন কেবল একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার মঞ্চ নয়, বরং মার্কিন প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক জোট গঠনের প্রচেষ্টা। শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে যে, ট্রাম্পেরউৎপীড়নমূলকনীতির জবাবে তারা একটি বিকল্প বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *