আমি পতিতালয়ের দুর্গা
সঙ্গীতা কর
শোনো, বীর্য স্খলন ছাড়া যে পুরুষ প্রাণ ধারণ করতে পারেনা
আমি তাকে বেঁচে থাকার অমৃত দান করি,
দীর্ঘদিনের অভুক্ত শরীর নিয়ে যে আসে আমার কাছে
আমি তাকে সর্বস্ব দিয়ে ভরিয়ে দিই,
যে ছেলেটি দিনের পর দিন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়
যার বেকারত্ব গ্রাস করে নেয় যৌবন
আমি তাকে সবুজ শ্বাস দিই
আমার বক্ষ যুগলের ঢেউয়ে সে নেচে ওঠে আপন খেয়ালে,
যে পুরুষ স্ত্রী পরিত্যক্ত
অবহেলার বিষবাষ্পে যার জীবন ওষ্ঠাগত
আমি তাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও খুশির ঠিকানা দিই,
আমার জঙ্ঘায় প্রাণ বাস করে
আমার কটিদেশে ভরা লাস্য
আমার দু চোখে বিদ্যুৎ খেলে
আমার হাসিতে মুক্তো ঝরে
আমার ঠোঁটে লাবণ্য মাখা
আমার শরীর কামনার অস্ত্রে পূর্ণ,
সেই অস্ত্রে আমি মিটিয়ে দিই যন্ত্রনা
বিনিময়ে ওরা আমায় দেয় চারাগাছ লালন পালনের দায়িত্ব
আমি মা হওয়ার আগে ওদের কাছ থেকে বীজ পাই
আবার মা হয়ে গেলে ওরা আমায় দুমুঠো ভাত দেয়,
ওদের কামড়ানো, মোচড়ানো অঙ্গগুলো প্রতিদিন আমার মাতৃত্বের কাছে নৈবেদ্য করে সাজাই
অথচ আমার মাতৃত্ব দেবী হয়ে ওঠে না!
ওরা আমাকে মায়ের কোল থেকে এনে এখানে বসায়
বেদিতে বসিয়ে আমার সতীত্বকে বলি দেয়
আমার বাসস্থানের মাটি নিয়ে তৈরি করে দেবী মূর্তি
তারপর মূর্তি তৈরি হলেই আমি নাকি অপবিত্র হই
আমার স্পর্শে পূজা পণ্ড হতে পারে!
অবহেলায় আমার গণ্ডুষ বেয়ে অঝোরে বৃষ্টি নামে
লবণাক্ত জল প্রশ্ন ছড়ায়
যে আমি বাঁচিয়ে তুলি শুষ্ক পুরুষত্ব
প্রাণ দান করি পিতার দায়ভার এড়ানো শিশুর
তা কি নয় আমার মাতৃত্বের অহমিকা?
আমি মা
আমি সাহসিনী একক মা
তবে কেন আমার স্পর্শে এত ঘৃণা?
আমাকে ঘৃণা করার আগে
একবার তুমি দেবতা হও সমাজ
তোমার দেওয়া অস্ত্রে ঝংকার তুলে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করবো আমার ঘোষণা
আমাকে যতটুকু ঘৃণা করো তার অর্ধেক ছুঁড়ে দাও বিপরীতে
দেখবে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে পুরুষ,
সব পুরুষ যদি সত্যি মহাদেব হতো
তবে আমিও কি দেবী হতাম না?