ঢাকার অন্যতম আইকনিক সড়ক পূর্বাচল হাইওয়ে ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এমআরটি লাইন ওয়ান প্রকল্পের কাজের জন্য কুড়িল থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত এই সড়কের বড় অংশে প্রভাব পড়বে বলে জানা গেছে। এর ফলে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি, আশপাশের জলাধার ভরাট হয়ে পরিবেশ বিপর্যয় এবং রাজধানীর অন্যতম সুন্দর সড়কটির সৌন্দর্য হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, লাইনটি আন্ডারগ্রাউন্ডে নির্মাণ করলে এসব সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। ২০১৩ সালে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৩০০ ফিট সড়কটি আধুনিকায়ন ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। সে সময় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকেও পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছিল যাতে উভয় প্রকল্প সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে এবং জনদুর্ভোগ কমে। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেনি। এখন যখন সড়কটি ব্যস্ততম ও আইকনিক একটি রূপ নিয়েছে, তখন আবার সেটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় নাগরিক ও পরিবেশবিদরা বলছেন, এত ব্যয়বহুল একটি সড়ক পুনরায় ভাঙলে জনদুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক ক্ষতি দুটোই ভয়াবহ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেল প্রকল্পটি যদি আন্ডারগ্রাউন্ডে করা হয়, তবে খরচ কিছুটা বেড়ে গেলেও ৩০০ ফিট সড়ক ও এর আশপাশের অবকাঠামো রক্ষা করা সম্ভব হবে। এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে নির্মিত হচ্ছে—একইভাবে কুড়িল থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত লাইনটি নিচ দিয়ে নেওয়া হলে সামগ্রিক খরচ প্রায় সমানই হবে বলে তারা মনে করেন। তাদের মতে, উপরে পরিকল্পিত স্টেশনগুলো খালের উপর এবং সংকীর্ণ জায়গায় হওয়ায় সেগুলো নির্মাণ করাও অত্যন্ত কঠিন হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকায় এক প্রকল্পের পরিকল্পনা আরেক প্রকল্পের ক্ষতি ডেকে আনা এখন এক ধরনের নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তারা উল্লেখ করেন, অল্প কিছুদিন আগেই বিপুল ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, এখন আবার সেই সড়ক কেটে এলিভেটেড মেট্রো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে—এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনাহীনতার উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করেছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৩০০ ফিট সড়কের আশপাশের জলাধার ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে, যা নগরবাসীর জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করবে। তাদের মতে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জলাধার ক্ষতি, খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণ দিকগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
অন্যদিকে, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পের ডিজাইন এখনো রিভিউ পর্যায়ে রয়েছে। তারা বলছেন, কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লাইনটি আন্ডারগ্রাউন্ড করলে খরচ বেড়ে যাবে তিন গুণ। বর্তমানে তারা সড়কের ভেতর দিয়ে এবং পাশ দিয়ে বিকল্প রুট বিবেচনা করছেন, যাতে ভাঙচুরের পরিমাণ কমানো যায়।
তবে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে। এই প্রকল্প এখন রাজধানীর অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সমন্বয়হীন পরিকল্পনার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠছে।