মোঃ ইফতেখার উদ্দিন
খালাতো বোন জুঁলিয়াকে ভালোবাসতেন আফতাবুল কাদের। ২০ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয় তাঁদের। কয়েক দিন পর আনুষ্ঠানিক জীবন শুরু করবেন, এমন সময় দেশে নেমে এল চরম দুর্যোগ ২৫ মার্চের কালরাত, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার। এলো মুক্তির ডাক, স্বাধীনতার ঘোষণা সেদিন তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। ফরিদাবাদে ছিল তাঁর মা-বাবার বাসা। সেনাবাহীনির ক্যপ্টেন ছিলেন তিনি।
সাধারণত সিনেমায় আমরা দেখেছি বিয়ের রাতে যুদ্ধে গিয়ে হাজারো মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দেশের শহীদ হন নায়ক।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা মাঝে মাঝে সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়।
১৯৭১ এর ২৭ এপ্রিল, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগী মিজোদের সাথে মারাত্বক যুদ্ধ হয়,, পাকি আর্মিরা মুক্তিযোদ্ধা দের চারদিকে ঘিরে ফেলে, উপায় না দেখে মুহু মুহু গুলিবৃস্টির মাঝেও হারকিউলিস এর মত ড্রিবলিং করতে করতে নিজের জীবন বাজি রেখে কাভারিং ফায়ার করে
কোম্পানি কে বাঁচিয়ে দিলেন ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের।
সহযোদ্ধারা অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখে, এটি কি মানুষ????? একজন এর কাভারিং এর ফলে পুরো কোম্পানি নিরাপদে ফিরে যায়। হটাত ই একটি বুলেট এসে বিধলো আফতাবুল কাদের ব বুকে,,, মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বীর।
৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে রণক্ষেত্র থেকে সহযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন কাদেরকে একটি জীপে নিয়ে রওনা হন রামগড়ের উদ্দেশ্যে। আকাঁবাকা পাহাড়িয়া রাঙ্গা পথের কোন এক স্থানে সকলের অজান্তে ই বাঘের মত হুংকার ছেড়ে যুদ্ধ করা যোদ্ধা প্রিয়তমা স্ত্রীর লাগিয়া দেয়া মেহেদি রাঙা হাতের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
এ যে চির নিদ্রা, পরম সুখের নিদ্রা। দেশেরতরে মুক্তির তরে প্রিয়তমার সুখকে কোরবানি দেয়া। চাইলেই কাভারিং ফায়ার বন্ধ রেখে পালিয়ে বাঁচতে হয়তো পারতেন। কিন্তু বীরের জন্ম যে পিছু হটার নয়, বীরকে মরতে হয় বীরের মতোই।
২৮ এপ্রিল ভোরে রামগড় কবরস্থানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাঁকে। এ বীর শহীদযোদ্ধার পবিত্র দেহের স্পর্শে পবিত্রতা লাভ করে রামগড়ের মাটি। সেদিন নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রায় ২০০ মুক্তিসেনার জীবন বাঁচিয়েছিলেন তিনি। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অতুলনীয় বীরত্বকে চির স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন তাঁকে।
এত রক্তের দেনা কি পরিশোধ যোগ্য ????
আমরা কজনই বা জানি এই বীরদের আত্মত্যাগের কথা ?? পারবো কী শুধিতে এই রক্তের ঋণ?