ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, ছাত্র আন্দোলন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম দুর্বৃত্তায়িত চাঁদাবাজ রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তনের দাবি তুলছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনেবাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথরেখাশীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না কথা বলেন। সভার আয়োজন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনীতি শুধুই মিথ্যাচার, চাঁদাবাজি ক্ষমতা দখলের লড়াই হলে তা টেকসই হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে, কারণ জনগণ বিকল্প খুঁজছে।

ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০৪০ বছর আগে কোনো রাজনৈতিক দল খোলা মাঠে দাঁড়াতে পারত না, বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতো। এখন সেই দলগুলোও মাথা উঁচিয়ে সামনে আসছে এবং বড় দলগুলোও নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সাহস দেখিয়েছে, যা আগের প্রজন্ম পারত না। এখন আর বড় জনসভা নয়, বরং সাইবার প্রচারণা নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা রাজনীতি চালাচ্ছে। এই প্রজন্ম প্রথাগত সংস্কৃতিবড় ভাইয়ের প্রটোকল, দখলদারির রাজনীতিপ্রত্যাখ্যান করেছে। তারা রাজনীতিকে আন্তরিকতা, সংগ্রাম অঙ্গীকারের মাধ্যম হিসেবে দেখছে, লুটপাট বা ক্ষমতার শর্টকাট হিসেবে নয়।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ছাত্ররা ভিন্ন উদাহরণ স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে শুধু ঐক্য সংস্কারের মাধ্যমে। সংকট নিরসনে সুপ্রিম কোর্টের রায় গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে এবং তা সকলকে মানতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়, এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত সংগ্রাম। সৎ, অংশগ্রহণমূলক সংস্কারমুখী রাজনীতি গড়ে তোলাই ভবিষ্যতের জন্য উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তি।

জাতীয় রাজনীতিতে ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে দ্বিমতও এসেছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডাকসুর ফল যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যায়, তা জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গুরুত্ব পাবে না। ৩২ হাজার ভোট জাতীয় নির্বাচনের ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটারের তুলনায় সমুদ্রে এক ফোঁটার মতো।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে দুর্বৃত্তায়িত শাসন লুণ্ঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাঠামো আইনগত সংস্কার প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা সরকার রাজনীতিবিদরা একটি সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের টেকানোর জন্য ব্যবহার করছে।

আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য আকবর খান এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *